অনেক গল্প জড়িয়ে আছে ভোকাবিল্ডারের সাথে।
প্রথম থেকে শুরু হয়ে, বিবর্তনের অনেক ধাপ পেরিয়ে, আজ ভোকাবিল্ডার আপনাদের সামনে বই আকারে পাবলিশ হয়েছে। এটার আংশিক বিবর্তন অনেকে বেশ কাছ থেকে দেখেছে। বই আকারে পাবলিশ হবার আগেই এটার কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে বেশ অনেকজনের কাছেই। কিন্তু একেবারে প্রথম থেকে কেমন করে এটা শুরু হয়েছিলো, সেটা খুব কম মানুষেরই জানা। কাজটা কষ্টের ছিলো, কিন্তু আনন্দদায়ক ছিলো, উত্তেজনাকর ছিলো। আমি জানি না, আপনাদের কাছে পুরো গল্পটা শুনতে ভালো লাগবে কি না। But, here it is.
২০১০ সালের এপ্রিল মাসে আমেরিকাতে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে GRE এর প্রস্তুতি নেয়া শুরু করি। ব্যারন্স এর বইটা খুলে ভোকাবুলারি শিখতে গিয়ে একটা ধাক্কামতো খাই। এভাবে ডিকশনারী থেকে শব্দ শেখার মানেটা কী? এই পেজের শব্দ পড়ি, তো আগের পেজেরটা ভুলি। প্রচুর ইংরেজি মুভি দেখার ফলে অনেক শব্দ আগে থেকেই আমার জানা ছিলো। নিজেকে মনে মনে স্বান্তনা দিচ্ছিলাম, যারা একেবারেই মুভি দেখে না, বা বই পড়ে না, তাদের চেয়ে আমার কষ্ট কম হবে, পড়ে যেতে থাকি। কিন্তু, দু-তিনদিনের মধ্যেই হাল ছেড়ে দিলাম। শুরু করলাম বইয়ের মধ্যে systematically দাগানো……
Appease এর পর যখন সেটারই আরেকটা প্রতিশব্দ assuage চোখে পড়লো, তখন assuage এর পাশে একদম ছোটো করে appease, আর appease এর পাশে একদম ছোটো করে assuage লিখে রাখলাম। একইভাবে condole, console এর পাশেও appease, assuage এগুলো লিখে রাখতে থাকলাম। পরে যখন দেখি কিছু কিছু শব্দের অনেক বেশি synonym লেখা হয়ে গেছে বইতে, সেগুলোকে বেঁচে যাওয়া কিছু লিফলেট এর পেছনের পাতায় লিখে রাখতে লাগলাম। নেহায়েতই খেলাচ্ছলে, জাস্ট মাঝে মাঝে একটু চোখ বোলাবো বলে। তখন কি আর জানতাম, এই জিনিসটাই একদিন একটা বইয়ের জন্ম দেবে?
শুধুমাত্র synonym লেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ রইলো না। বেশ কিছু শব্দ যে সম্পর্কিত, সেটা খুব দ্রুতই আবিষ্কার করে ফেললাম। এবং সেই শব্দগুলো যে একসাথে পড়া উচিৎ, সেটাও বুঝতে বাকী রইলো না। যেমন, accord, concord আর discord, concordant আর discordant, এগুলোর যে একসাথে থাকা উচিৎ, সেটা সহজেই বোধগম্য। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, alphabetically একটা a দিয়ে, আরেকটা c বা d দিয়ে। এরা একসাথে নেই। এদেরকে একসাথে করতে থাকলাম। মাসখানেক পর দেখা গেলো, চটিতে জায়গা হচ্ছে না। আবার গ্রুপ শব্দগুলো জমতে জমতে গুচ্ছ গুচ্ছ হয়ে গেছে। সেগুলোকে একটা একটা নাম দিয়ে চ্যাপ্টার বানিয়ে ফেললাম। জড়ো করলাম আরেকটা প্যাডে।
আগেরবার কোনো ধারণাই ছিলো না যে আমি কী করছি। এবার অন্তত কিছুটা হলেও ধারণা আছে, এটার সাইজ সম্পর্কে। তাই একটা প্যাড নিলাম। কিন্তু তখনো ঘুণাক্ষরেও মাথায় আসেনি, এই জিনিস থেকে বই হতে পারে। After all, জিনিসটা এতো র্যান্ডম ছিলো যে এটা ধারণা করাও সম্ভব না। আর লিখছিলাম শুধু নিজের জন্যেই, তাই হাতের লেখার অবস্থা আমি-ছাড়া-কেহ-বুঝিবে-না টাইপের। এর মধ্যে আমার GRE partner সালমান বিন হোসাইন এলো ঢাকা থেকে ঘুরতে। একই পাতার মধ্যে লাইন করে একটা শব্দের সবগুলো synonym, antonym সাজানো দেখে ওর খুব পছন্দ হলো। দাবি করলো, ওকে এটা দিতে হবে।
Generally, আমার হাতের লেখা খারাপ না বলেই শুনে এসেছি, কিন্তু ভার্সিটিতে ওঠার পর পরীক্ষা ছাড়া হাতে লেখালেখি না হওয়ার কারণেই হোক, আর একান্তই নিজের বলেই হোক, ঐ হাতের লেখা আসলেই কাউকে দেয়ার মতো ছিলো না। ততদিনে ব্যারন্স এর পুরো পঞ্চাশটা word list একবার পড়া হয়ে গেছে। আর ঐ প্যাডটাতে ৩০টা চ্যাপ্টার তৈরি হয়েছে। সালমানকে দেয়ার জন্যেই প্রধানত এটাকে সুন্দর করে সাজানো আরম্ভ করলাম আরেকটা প্যাডে।
এবার হাতের লেখা বোধগম্য রাখার চেষ্টা করলাম। লাইনগুলোও টানলাম স্কেল দিয়ে। সত্যি কথা হচ্ছে, আমি তখনো জানতাম না, এটাই ভোকাবিল্ডারের প্রাথমিক কংকাল ছিলো। সেই ৩০টা চ্যাপ্টার তুললাম এখানে, চ্যাপ্টারগুলো alphabetically সাজালাম। এটা সালমানকে দিলাম পড়ার জন্য। আর আগের প্যাডে অন্যান্য কিছু চ্যাপ্টারের ড্রাফট করতে থাকলাম। এটার ফটোকপি সালমানকে দেয়ামাত্র সে চরম উল্লসিত হলো, ব্যারন্সকে মা-বাপ তুলে গালি দিতে ছাড়লো না। কিন্তু তার মানে এই না যে, এটা পড়লে ব্যারন্স আর পড়তে হবে না। এখানে তখনো এতো বেশি শব্দ ছিলো না যে, GRE vocabulary preparation এর জন্য সব বাদ দিয়ে এটা পড়লেই হবে।
আগের প্যাডে বেশ কিছু চ্যাপ্টারের ড্রাফট মোটামুটি আকার ধারণ করলো, সেগুলোকে এই নতুন প্যাডে নিয়ে এলাম। তবে আগেরগুলোকে ইতোমধ্যেই alphabetically সাজিয়ে ফেলেছিলাম, তাই এদেরকে মাঝখানে ঢোকাতে পারছিলাম না। মাথায় একটু অদ্ভুত ইচ্ছা জাগলো। সবগুলো চ্যাপ্টারকে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে লিখে ফেললে ক্যামন হয়? তাহলে alphabetical serial এর মাঝখানে কোনো চ্যাপ্টার ঢোকাতে আর কোনো প্রবলেম হবেনা। পুরাই বেহুদা একটা আইডিয়া! সামনে GRE test, আমার অন্যান্য জিনিস প্র্যাকটিস করা উচিৎ। কিন্তু মনকে বোঝালাম, “আরে, এটাও তো প্র্যাকটিস, শব্দগুলো টাইপ করতে করতে রিভিশন হয়ে যাবে”……… করে ফেললাম কয়েকদিন লাগিয়ে। তখন আগস্ট মাস, GRE পরীক্ষার যখন এক মাসের মত বাকী, তখন ৩৫টার মত চ্যাপ্টার টাইপ করা হয়েছে। পাঠিয়ে দিলাম সালমানকে……
এটা দেখে সালমান আরো উত্তেজিত। সে বললো, “মাসুম, এই জিনিস যদি বাজারে আসে, মানুষ সব বাদ দিয়ে এটা পড়বে”……… জানিনা, এতো কনফিডেন্স সে কোথায় পেয়েছিলো, আমি নিজেই অনেক ক্রিটিক্যাল ছিলাম। তখন সেপ্টেম্বর মাস, পরীক্ষার দশদিন আগে চিটাগাং থেকে ঢাকায় চলে গেলাম। ঐ সময়ে প্রিপারেশনের পাশাপাশি আরো তেরোটা চ্যাপ্টার টাইপ করলাম। পরীক্ষার পরেও ঝোঁক থাকায় আরো কিছু টাইপ করে মোট ৬০ পৃষ্ঠার একটা বাণ্ডিল তৈরি হলো। এটাই সবচেয়ে দীর্ঘতম ধাপ। অনেকের অনুরোধে এই ভার্সনটার পিডিএফ সমানে ইমেইল করেছি। অনেকে এসে ফটোকপি করে নিয়ে গেছে। অনেকেই অনেক প্রশংসা করেছে।
কিন্তু এবার শুরু হবে এই বইটার প্রকৃত ট্রায়াল। ২০১১ এর মার্চ মাস, আমার নিজের GRE preparation শুরু করার (এবং সেই চটিতে synonym, antonym লেখা আরম্ভ করার এক বছর পর) IIUC এর কিছু আগ্রহী ছেলেদের অনুরোধে, আমি আর সালমান মিলে শুরু করলাম NexTop-USA, শুরু করলাম GRE পড়ানো। ভোকাবুলারির জন্য ওদেরকে ব্যারন্স দিলাম না, দিলাম আমার বানানো ৬০ পৃষ্ঠা। সব ছাত্ররা immediately পছন্দ করলো, ওদের class performance দেখে বুঝলাম, শব্দগুলো ওদের ভালোই মনে থাকছে। যারা দিনরাত Barron’s পড়ে, ওদের চেয়ে বেশি ভালোভাবে মনে থাকছে।
এর মধ্যে আরো অনেকবার বেশ অনেকজনই পরামর্শ দিয়েছে, কেন এটাকে বই আকার ছাড়ছি না। জানিনা, কেন যেন বই আকারে ছাড়ার ব্যাপারে আমার একটু খুঁতখুঁত করতো। NexTop-USA এর ফেসবুক পেজে শুরু থেকেই গ্রুপ গ্রুপ করে শব্দ পোস্ট করা হতো, এরপর শুরু করলাম অনেকগুলো শব্দ নিয়ে মজার মজার কনটেক্সট তৈরি করা। তখন এটাকে বই হিসেবে বের করার জন্য অনুরোধ আরো বেড়ে গেলো। নেক্সটপের ছাত্রদেরকে দিচ্ছি, দূর-দূরান্তে কেউ চাইলে ইমেইল করে দিচ্ছি, এভাবেই কেটে গেলো আরো এক বছর। এর মধ্যে শুধু নতুন যোগ হলো আরো ছয় পৃষ্ঠা। এই ছয় পৃষ্ঠাকে আমি বলতাম, সহীফা। এভাবে চলে গেলো আরো একটা বছর। এদিকে ওদিকে এটা সেটা এডিট করেছি মাঝে মাঝে।
২০১২ এর মার্চের দিকে সিদ্ধান্ত নিলাম, এটাকে বই আকারে পাবলিশ করবো। সামনাসামনি পড়াতাম বলে অনেক কিছু (গল্প, মুভি রেফারেন্স, কনটেক্সট) মুখে মুখে বলা যেতো। কিন্তু এটা পড়াবার জন্য যদি আমি না থাকি, তাহলে বইটা কেমন হওয়া দরকার, সেই উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করলাম। বাংলা অর্থ যোগ করলাম, মজার মজার mnemonics যোগ করলাম, combined context গুলো যোগ করলাম। This was the toughest part. প্রায় এক মাস আমি প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা শুধু এই কাজগুলো করেছি। পুরো বইয়ের ফরম্যাট fine tuning করেছি। শুরুর দিকে এটার নাম হিসেবে Word Network কে consider করেছিলাম, পরে সেই বন্ধু সালমান এর সাথে আলোচনা করতে করতে হঠাৎ সে চিৎকার করে উঠলো,
এটার নাম হবে ভোকাবিল্ডার।
শেষ পর্যন্ত the inside looked like this…….
সেই ৬৬ পৃষ্ঠা বেড়ে দাঁড়ালো ১৫৫ পৃষ্ঠায়, চ্যাপ্টারের সংখ্যা হলো ৭৪… যোগ করলাম alphabetical index, যাতে সহজেই যে কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় (that was another pain in the ass too, but it was worth it). কভার নিয়ে আরেক ঝামেলা হলো, প্রথমে যে করবে বলেছিলো, সে একদম চুপ মেরে গেলো, কোনো সাড়া শব্দ নেই। এদিকে হাতে সময়ও নেই। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ফার্স্ট বয় সাজ্জাদ মজুমদার একটা ভিত তৈরি করে দিলো, সেটার ওপরেই ঐ এক রাতেই adobe illustrator এর বেসিক শিখে কভার রেডি করলাম। অবশ্য প্রেসের কম্পিউটার অপারেটর রাহাত মাহমুদ রাজু অনেক ফাইন টিউনিং করে দিয়েছে। তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। প্রথম সংস্করণের কভার ছিলো এমন…
ছোটো ছোটো আরো অনেক ঘটনা বলার ইচ্ছে ছিলো। পরে মনে হলো, ওগুলো আসলে একান্ত ব্যক্তিগত ঘটনা। বিশদভাবে না বললে বোঝা যাবে না, কী অনুভূতিগুলো জড়িয়ে আছে সেগুলোর সাথে। But I will tell you one. যেদিন ছাপা হলো, সেদিন সন্ধ্যায় পাবলিশার ফোন করে বললো, “ভাই, আপনার বই প্রেস থেকে নিয়ে আসছি, কার্টন খুলে তাকে রাখার আগেই চারটা বিক্রি হয়ে গেছে” – I melted at that time.
এরপর প্রায় তিন বছর হতে চললো, এর মধ্যে আটটি মুদ্রণ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় সংস্করণে যুক্ত করেছিলাম প্রত্যেকটা চ্যাপ্টারের ওপর বানানো ভিডিওসহ ডিভিডি, প্রত্যেকটা শব্দের উচ্চারণ, নতুন ফরম্যাটিং। নতুন ফরম্যাটিং এ দেখতে লেগেছিলো এরকম…
এখন বের হতে চলেছে তৃতীয় সংস্করণ। তৃতীয় সংস্করণের জন্য এই কভারটা বানিয়ে দিয়েছে আমি সুজন…
ভোকাবিল্ডারকে এতো দূর নিয়ে আসার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।